সাভার প্রতিনিধি, (এবিসি ওয়ার্ল্ড নিউজ ২৪.কম) :
দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগলেও দায়িত্ব পালনকালে ব্যস্ত সময় পার করায় চিকিৎসা করাতে পারছিলেন না সাভার মডেল থানায় কর্মরত পুলিশ সদস্য প্রভাষ চন্দ্র সরকার। বাংলাদেশের ঢাকা জেলায় এই প্রথম থানা পর্যায়ে এসে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রোগী দেখবেন সঙ্গে চিকিৎসা পত্র ও ওষুধ দেবেন জেনে মেডিকেল ক্যাম্পে চিকিৎসা নেন তিনি। চিকিৎসা নিতে এসেই জানতে পারেন তার শরীরে নানা রোগ বাসা বেধেছে।
রবিবার (৯ জুলাই) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ঢাকা জেলা পুলিশের উদ্যোগে থানা পর্যায়ে মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়েছে। সাভার মডেল থানার বৈঠক রুমে মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মরত শতাধিক পুলিশ সদস্য সেখানে বিনামূল্যে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ পেয়েছেন।
ঢাকা জেলা পুলিশের এ আয়োজনে চিকিৎসা সেবা নেওয়া সাভার মডেল থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক সিকদার হারুন অর রশিদ সন্তোষ জানিয়ে বলেন, ‘আজ এই মেডিকেল ক্যাম্পে এসে আমার উচ্চ রক্তচাপের ভয়াবহতা সম্পর্কে জানতে পারলাম। বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে তারা আমার হাইপারটেনশন পরিমাপ করেছে এবং কয়েক সপ্তাহের ওষুধ আমাকে বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে।’
সন্তোষ প্রকাশ করে সাভার মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক ইন্টেলিজেন্স আব্দুল্লা বিশ্বাস বলেন, আমরা যারা পুলিশে চাকুরি করি তাদের দিনরাত পরিশ্রম করে আইন প্রয়োগ ও শৃঙ্খলার দায়িত্ব পালন করতে হয়। সময়ের খাবার সময়ে না খাওয়া, অতিরিক্ত সময় না ঘুমানোয় আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের অজানা রোগ জীবাণু বাসা বাঁধে এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ায়। যা অনেক সময় জীবন দুর্বিষহ করে তোলে। সময়ের অভাবে ঢাকা গিয়ে ভালো চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়ে ওঠেনা। আজ বিভিন্ন পর্যায়ের অফিসার ও ফোর্স এখানে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চিকিৎসা পেয়েছে। ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মোঃ আসাদুজ্জামান (পিপিএম)- বার, স্যারের নির্দেশে থানা পর্যায়ে এই উদ্যোগ আমাদের স্বাস্থ্যের প্রতি আরো মনোযোগী করে তুলবে। সেখানে অনেককেই বিনামূল্যে ওষুধও দেওয়া হয়েছে।’
রবিবার সকালে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের পক্ষে সাভার মডেল থানায় এই মেডিকেল ক্যাম্প উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) মোঃ শাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মো: আসাদুজ্জামান (পিপিএম)- বার, স্যারের উদ্যোগে ঢাকা জেলার প্রতিটি থানায় মাসে একদিন করে এই মেডিকেল ক্যাম্পের কার্যক্রম চলমান থাকবে। চলতি বছরের ২১ জুন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় চিকিৎসা সেবা ও ওষুধ প্রদানের মাধ্যমে বাংলাদেশে এই প্রথম মেডিকেল ক্যাম্প কার্যক্রম শুরু হয়। এর ধারাবাহিকতায় আজ দ্বিতীয় দিন সাভার মডেল থানায় দিনব্যাপী পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
ঢাকা জেলা পুলিশের ব্যবস্থাপনায় জেলা পুলিশ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডাঃ সোহানা মেহেজাবিন চিকিৎসা প্রদান করেন। ব্যবস্থাপত্র দেখে পুলিশের কর্মকর্তা ও সদস্যদের বিনামূল্যে জরুরি ওষুধ প্রদান করেন জেলা পুলিশ হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট আলাউদ্দিন।
চিকিৎসক জানান, মেডিকেল ক্যাম্পে আসা রোগীদের অধিকাংশই পরিপাকতন্ত্রের অসুখ, গ্যাস্ট্রিক, সর্বাঙ্গে ব্যথা, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও অপুষ্টি সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে এসেছেন। সবাইকে যথাযথ ব্যবস্থাপত্র, ওষুধ ও বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে অনেক সময় হ্যাটট্রিক ডিউটি করায় অতিরিক্ত ডায়াবেটিস ও হাইপারটেনশনের কারণে সাভার মডেল থানায় কর্মরত পুলিশ সদস্য প্রভাষ চন্দ্র সরকারের শারীরিক অবস্থার কথা বিবেচনায় নিয়ে তাকে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে আরো কিছু টেস্ট করতে বলা হয়েছে। রিপোর্ট দেখে তাকে উন্নত চিকিৎসা প্রদান করা হবে। তিনি এর আগে জানতেনই না তার উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস রয়েছে।
এ বিষয়ে সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা পিপিএম এ আয়োজনের প্রশংসা করে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মোঃ আসাদুজ্জামানন (পিপিএম)- বার এর প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী থানায় কর্মরত পুলিশ সদস্য প্রভাষ চন্দ্র সরকারের উন্নত চিকিৎসা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলেও জানান তিনি।
মেডিকেল ক্যাম্প উদ্বোধনের সময় সাভার মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুর রাশিদ, পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) নয়ন কারকুন, পুলিশ পরিদর্শক (ইন্টেলিজেন্স) মোঃ আব্দুল্লা বিশ্বাসসহ পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এ ব্যাপারে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার মোঃ আসাদুজ্জামান (পিপিএম)- বার জানান, দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, চিকিৎসা পত্র ও বিনামূল্যে থানা পর্যায়ে ওষুধ প্রদানের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। চলতি মাসের আগামী ১৩ জুলাই কেরানীগঞ্জ মডেল থানা, ১৬ জুলাই ধামরাই থানা, ২০ জুলাই আশুলিয়া থানা, ২৪ জুলাই সকালে নবাবগঞ্জ থানা ও বিকেলে দোহার থানায় মেডিকেল ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হবে। এ ধারাবাহিকতা আগামী দিনে অব্যাহত রাখবে ঢাকা জেলা পুলিশ।